সাজেক থেকে রাঙ্গামাটি যেভাবে যাবেন

মেঘের রাজ্য সাজেক ঘুরে কিভাবে যাবেন রূপের রানী রাঙ্গামাটিতে

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিনই প্রচুর পর্যটক বেড়াতে আসেন বাংলাদেশের বেশ জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র মেঘের রাজ্য সাজেকে। সাজেক ভ্যালীতে একরাত অথবা ২রাত কাটিয়ে আবার চলে যান নিজ নিজ গন্তব্যে। কিন্ত অনেক পর্যটকই আছেন যারা সাজেক ঘুরে আবার উপভোগ করতে চান রূপের রানী রাঙ্গামাটিকে। কিন্তু সঠিক গাইড লাইনের অভাবে অনেকেই আবার রূপের রাঙ্গামাটি ভ্রমণ ক্যান্সেল করেন। আপনারা যারা সাজেক ঘুরে সহজেই রাঙ্গামাটির প্রকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে চান তাদের জন্যই এই ব্লগ।

সাজেক ভ্যালী

সাজেক থেকে যেভাবে যাবেন রাঙ্গামাটি

যারা রাঙ্গামাটি সহ সাজেক ভ্রমনের প্ল্যান করবেন বলে ভাবছেন তাদের জন্য এই পোষ্টটি। সাজেকে ভালোভাবে রিলাক্সে বেড়ানোর জন্য অন্তত দুইরাত থাকা উচিত। হাতে সময় কম থাকলে একদিনে সব কিছু দেখে শেষ করতে পারবেন তবে একটু কষ্ট হয়ে যাবে। সাজেকে একরাত অথবা দুইরাত থেকে সকাল ১০টার আর্মির স্কটে সাজেক থেকে বের হয়ে খাগড়াছড়ি যাবেন। খাগড়াছড়ি পৌঁছে দুপুরের খাবার শেষ করে খাগড়াছড়ির যে কটা স্পট আছে যেমন রিসাং ঝর্ণা, আলুটিলা গুহা, তারেং, জেলা পরিষদ পার্ক দেখে শেষ করবেন। তারপর চলে আসবেন খাগড়াছড়ি শহরের লোকাল বাস টার্মিনাল। এইটা এই বাস টার্মিনাল খাগড়াছড়ি সিটি গেইটের একটু আগে। জায়গার নাম শান্তি নগর। এই বাস টার্মিনাল থেকেই পেয়ে যাবেন রাঙ্গামাটির বাস। খাগড়াছড়ি থেকে রাঙ্গামাটি যেতে সময় লাগবে ০২-০২.৩০ ঘন্টা। এই রুটে বাস ভাড়া ১৭০-২০০টাকা। খাগড়াছড়ি থেকে রাঙ্গামাটির শেষ গাড়ি ছাড়ে বিকেল—–টায়। তাই চেষ্টা করবেন এই সময়ের আগেই বাস টার্মিনালে উপস্থিত থাকতে। নাহয় ওইদিন আর আপনি রাঙ্গামাটি যেতে পারবেন না। খাগড়াছড়ির সকল দর্শনীয় স্থানগুলো বেড়াতে সময় নিবেন খুবই অল্প। তাহলেই আপনার সিডিউল অনুযায়ী ভ্রমণ শেষ করতে পারবেন।

কাপ্তাই লেক

খাগড়াছড়ি থেকে রাঙ্গামাটি এই রুটের বাসগুলো খুবই নরমাল বাস। তাই যারা এই রুটে আরামদায়ক ভ্রমণ চান তাদের জন্য ভালো হবে খাগড়াছড়ি থেকে রেন্ট এ কারের সার্ভিস নেয়া। গাড়ি বেদে এর ভাড়া ৬০০০-১০০০০টাকা পর্যন্ত হতে পারে। এই রুটে নির্দিষ্ট সময়েই চলাচল করা যায়। ————— টার মধ্যেই আপনাকে খাগড়াছড়ি থেকে রওনা দিতে হবে, নাহয় আর ওইদিন যাওয়া যাবেনা।

আমাদের রেন্ট –এ কার সার্ভিস

আগে থেকে হোটেল বুকিং থাকলে বাস থেকে সেই লোকেশনে নেমে যাবেন। লোকাল বাসগুলো রাঙ্গামাটি শহরের রিজার্ভ বাজার পর্যন্ত যায়। রিজার্ভ বাজারেও বেশ ভালো অনেকগুলো হোটেল আছে। আবার বাজেট হোটেলও আছে। আপনি চাইলে সেখানে কম খরচে থাকতে পারবেন। যেহেতু আপনি খাগড়াছড়ি থেকে বিকেলে রওনা দিবেন তাই আগে থেকেই হোটেল বুকিং করে যাবেন। পর্যটন বিকাশের সাথে সাথে কাপ্তাই লেকে পর্যটকদের ভ্রমণকে আরো আরামদায়ক এবং আনন্দময় করে তুলতে তৈরি হয়েছে বেশ কিছু বিলাসবহুল হাউজ বোট, আপনি চাইলে সেখানেও থাকতে পারবেন। তবে খাগড়াছড়ি থেকে বিকেলে রওনা দিয়ে এইসব বোটে ভ্রমণ করা যাবেনা। (পুরো বোট রিজার্ভ করলে হিসেবটা আলাদা) সেজন্য একরাত শহরের যেকোন একটা হোটেলে রাত কাটিয়ে পরদিন সকালে থেকে প্রমোদতরীতে আনন্দময় ভ্রমণ করতে পারবেন। এছাড়া লেকের মাঝে আছে বেশ কি ইকো রিসোর্ট। প্রকৃতির একেবার কাছাকাছি থাকতে চাইলে সেগুলতেও থাকতে পারেন।

রিজার্ভ বাজার থেকেই কাপ্তাই লেক ঘুরার জন্য টুরিষ্ট বোট বা নৌকা পেয়ে যাবেন। নৌকাগুলো মুলত সারা দিনের জন্য ভাড়া করা হয়, কাপ্তাই লেকে যে কয়টা পর্যটন স্পট আছে সবগুলোতেই ঘুরিয়ে নিয়ে আসবে। নৌকা গুলোতে ২৫-৩০ জন বসতে পারে। লোকেশান, নৌকার মান এবং ধারণক্ষমতা এর উপর ভিত্তি করে ভাড়া নির্ধারন হয়ে থাকে।

রাঙ্গামাটিতে হোটেল এবং টুরিষ্ট বোট বুকিং এর জন্য যোগাযোগ করুনঃ +8801841862600

টুরিষ্ট বোটে আপনি যেসকল জায়গায় ঘুরে বেড়াতে পারবেন

কাপ্তাই লেক, শুভলং বড় ঝর্ণা, শুভলং ছোট ঝর্ণা, পেদা টিং টিং, টুকটুক, ঝুলন্ত ব্রীজ, পলওয়েল পার্ক, রাজবন বিহার, চাকমা রাজার বাড়ি, নেভী একাডেমী, কাপ্তাই বাঁধ, কর্নফুলি নদী, আরণ্যক, ডিভাইন লেক, ধুপপানি ঝর্ণা ইত্যাদি। এইসব স্থান একদিনে ঘুরে বেড়ানো সম্ভব না। ২-৩ দিন সময় লাগবে।

লেকের খাবার দাবার

বর্তমানে কাপ্তাই লেকে বিভিন্ন উদ্যোক্তার উদ্যোগে বেশকিছু ভালো মানের রেস্তরা গড়ে উঠেছে, যাদের খাবারের বেশ মানসম্মত। পর্যটকগন একবার খেলেই এই খাবারের স্বাদ অনেক দিনই মুখে লেগে থাকে। লেকের মধ্যে অবস্থিত সকল রেস্তরাতেই পাহাড়ি খাবার পাওয়া যায়। তবে মাছে ডিসগুলোই রেস্তরাগুলোতে প্রাধান্য পায়। দক্ষিন এশিয়ার সবচাইতে বড় লেকে গিয়ে লেকের বাহারি রকমের মাছ না খেয়ে কেন আসবেন। রেস্তরা গুলোতে জনপ্রিয় ডিসগুলো হচ্ছে রুই কাবাং, কাচকি ফ্রাই, চাপিলা ফ্রাই,ব্যাম্বু রুই মাছ, বাছামাছ কারি, রুই মাছের ভর্তা, ব্যম্বু চিকেনসহ পাহাড়িদের বিভিন্ন রকমের খাবার। তবে লোকসংখ্যা বেশী হলে আগে থেকেই খাবারে অর্ডার দিয়ে যাবেন। লেকের রেষ্টুরেন্ট গুলো সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ০৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে। লেকের রেষ্টুরেন্ট গুলোর নাম হচ্ছে- ঝুমঘর, চাং পাং, টং ঘর।

কাপ্তাই লেক ভ্রমণে যে বিষয়গুলো অবশ্যই লক্ষ রাখবেন

  • কাপ্তাই লেক আমাদের সম্পদ, লেক এবং লেকের আসে পাশের জীব বিচিত্রের যাতে ক্ষতি হয় এমন কিছু করবেন না।
  • স্থানীয় আদিবাসীদের সাথে ছবি তোলার আগে অবশ্যই অনুমতি নিয়ে নিবেন।
  • বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এরিয়ায় মধ্যে পর্যটকদের ছবি তোলা সম্পূর্ণ নিষেধ, তাই সকল ক্যান্টনমেন্ট এবং সেনা ক্যাম্পে ছবি তোলা থেকে বিরত থাকুন।
  • যাওয়ার আগে অবশ্যই হোটেল / রিসোর্ট এবং নৌকা বুকিং দিয়ে আসবেন।
  • জাতীয় পরিচয় পত্রের অন্তত একটি কপি সঙ্গে রাখবেন।
  • কাপ্তাই লেকের সৌন্দর্য্য এবং পরিবেশ রক্ষায় আবর্জনা যেখানে সেখানে ফেলা থেকে বিরত থাকুন। প্রতিটি বোটেই আছে একটি করে ডাষ্টবিন। ময়লা আবর্জনা সেখানেই ফেলুন।

আরো পড়ুন

Scroll to Top