বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র মেঘের রাজ্য সাজেক। প্রতিদিনই সাজেকের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ছুটে আসেন পর্যটকগন। এক বা দুইদিন সাজেকের সৌন্দর্য উপভোগ করে চলে যান নিজ গন্ত্যবে। অনেকেই কাপ্তাই লেকের খুব কাছে এসে লেক ভ্রমণ কোন ভাবেই মিস করতে চান না। কিন্তু জানেন না কিভাবে যাবেন সাজেক থেকে কাপ্তাই লেক। এই পোষ্টে আমরা আপনাদের জানাবো কিভাবে যাবেন সাজেক থেকে কাপ্তাই, কোথায় থাকবেন, কি খাবেন, কিভাবে ঘুরবেন পুরো লেক।
সাজেক থেকে সকাল ১০.০০টার স্কটে প্রথমে চলে আসবেন খাগড়াছড়ি। খাগড়াছড়ি পৌঁছে দুপুরের খাবার খেয়ে নিবেন। তারপর খাগড়াছড়ির দর্শনীয় স্থান গুলো বেড়িয়ে নিবেন। চেষ্টা করবেন বিকেলের মধ্যেই খাগড়াছড়ি শহরে ফিরে আসতে। খাগড়াছড়ি শহরের নারিকেল বাগান বাস ষ্ট্যান্ড থেকে শান্তি পরিবহনের গাড়িতে করে চলে যেতে হবে চট্টগ্রাম শহরে। প্রতি ঘন্টায় শান্তি পরিবহনের একটি গাড়ি খাগড়াছড়ি থেকে চট্টগ্রামের উদ্দ্যেশ্যে ছেড়ে যায়। খাগড়াছড়ি থেকে চট্টগ্রাম যেতে সময় লাগবে ০৩.০০-০৩.৩০ ঘন্টা। শান্তি পরিবহনের শেষ স্টপেজ চট্টগ্রাম শহরের অক্সিজেন মোড়। অক্সিজেন নেমে সেখান থেকে চলে যাবেন বহদ্দার হাট বাস টার্মিনাল। বহদ্দার হাট থেকে প্রতি ৩০মিনিট অন্তর অন্তর কাপ্তাইয়ের বাস ছাড়ে। বহদ্দারহাট থেকে কাপ্তাই যেতে সময় লাগবে ০২.০০ – ০২.৩০ ঘন্টা। এই রুটের বাস ভাড়া জনপ্রতি ২০০-২৫০ টাকা। যেহেতু রাত হয়ে যাবে তাই কাপ্তাইয়ে আগে থেকেই হোটেল বুকিং দিয়ে যাবেন। সকাল বেলায় কাপ্তাই থেকে ঘুরার জন্য বোট পেয়ে যাবেন।
সকাল ১০টার আর্মি স্কটে সাজেক থেকে খাগড়াছড়ি চলে আসবেন। খাগড়াছড়িতে পৌছাতে পৌছাতে প্রায় দুপুর ০১.০০টা বেজে যাবে। খাগড়াছড়ি শহরে যে কোন একটা হোটেলে সেরে নিবেন দুপুরের খাবার। তারপর খাগড়াছড়ির কয়েকটা দর্শনীয় স্থান ঘুরে চলে আসবেন খাগড়াছড়ি বাস টার্মিনাল। এই বাস টার্মিনাল থেকেই রাঙ্গামাটি যাবার বাস পেয়ে যাবেন। প্রতি ঘন্টায় একটি গাড়ি ছাড়ে খাগড়াছড়ি থেকে রাঙ্গামাটির উদ্দ্যেশ্যে। এইসময় রওনা দিলে রাঙ্গামাটি পৌছাতে পৌছাতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে। আপনি চাইলে দুপুরের খাবারের পর হালকা রেষ্ট নিয়েও রওনা দিতে পারেন। খাগড়াছড়ি থেকে রাঙ্গামাটি যেতে সময় লাগে ০২.০০-০২.৩০ ঘন্টা। এই রুটের বাস ভাড়া ১৭০-২০০ টাকা। বাসগুলো একেবারেই নরমাল তাই যারা সাছন্দে ভ্রমণ করতে চান তারা খাগড়াছড়ি থেকে রেন্ট এ কারের সার্ভিস নিয়ে রাঙ্গামাটি যেতে পারবেন। গাড়ি এবং যাত্রী সংখ্যা বেদে ভাড়া ৬০০০ – ১০০০০ টাকা। রাঙ্গামাটি পৌঁছে টুরিষ্ট বোট ভাড়া করে কাপ্তাই লেক ভ্রমণ করতে পারবেন।
রেন্ট এ কারের জন্য ভাড়ার জন্য এই আর্টিকেল পড়ুনঃ আমাদের রেন্ট-এ কার সার্ভিস
কাপ্তাই লেক এবং রাঙ্গামাটি শহরে থাকার মত অনেক হোটেল এবং রিসোর্ট রয়েছে। খাগড়াছড়ির লোকাল বাস গুলো রাঙ্গামাটির রিজার্ভ বাজার পর্যন্ত যায়। রিজার্ভ বাজারে থাকার মত বেশ কয়েকটি হোটেল রয়েছে। যারা বাজেট ট্রাভেলার তারাও রিজার্ভ বাজার নিজেদের বাজেটের মধ্যে হোটেল পেয়ে যাবেন। যদি আপনি খাগড়াছড়ি থেলে একেবারে শেষ গাড়িতে করে রওনা দেন তাহলে রাঙ্গামাটি পৌছাতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে। তাই বিশেষ অনুরোধ থাকবে হোটেল বুকিং দিয়ে যাবেন। ( শুধুমাত্র রাঙ্গামাটিতেই নয় আপনি যেখানেই পরিবার নিয়ে বেড়াতে যাবেন অবশ্যই যাবার আগে হোটেল / রিসোর্ট এবং আসা যাওয়ার বাসের টিকিট কনফার্ম করে যাবেন। ) যেহেতু বাস রাঙ্গামটির শহরের শেষে রিজার্ভ বাজার পর্যন্ত যায় সেহেতু আপনি আপনার হোটেল লোকেশানে বাস থেকে নেমে যেতে পারবেন। বর্তমানে কাপ্তাই লেকেও ভালো মানের হোটেল এবং রিসোর্ট গড়ে উঠেছে। আপনি চাইলে আগে থেকে সেখানে বুকিং দিয়েও উঠতে পারেন। বর্তমানে কাপ্তাই লেকে থাকার জন্য আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা সম্বলিত বেশ কয়েকটি হাউস বোট হয়েছে। যেগুলোতে আপনি থাকতে পারবেন এবং কাপ্তাই লেকে ঘুরেও বেড়াতে পারবেন।
যদি রাঙ্গামাটি শহরেই থাকেন তাহলে রিজার্ভ বাজার থেকেই কাপ্তাই লেক ঘুরে বেড়ানোর জন্য টুরিষ্ট বোট পেয়ে যাবেন। এই ধরনের নৌকাগুলোতে ২৫-৩০ একসাথে ভ্রমণ করতে পারে। এই নৌকাগুলো সাধারণত সারাদিনের জন্যই ভাড়া হয়। ফিক্সড কোন ভাড়া নেই, তবে নৌকার মান, লোকসংখ্যা এবং কোন কোন স্পটে যাবেন সেটার উপর ভিত্তি করে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়। কিছু টুরিষ্ট বোট ঝুলন্ত ব্রীজ থেকে ছাড়ে। আপনার হাতে যদি সময় কম থাকে তাহলে একটা স্পিড বোট নিয়েও ভ্রমণ করে আসতে পারবেন।
রাঙ্গামাটিতে হোটেল এবং টুরিষ্ট বোট বুকিং এর জন্য যোগাযোগ করুনঃ +8801841862600
টুরিষ্ট বোট গুলোতে করে আপনি যে সকল স্থানে ভ্রমণ করতে পারবেন। ধুপপানি ঝর্ণা, কাপ্তাই লেক, ডিভাইন লেক, শুভলং বড় ঝর্ণা, আরণ্যক, শুভলং ছোট ঝর্ণা, পেদাটিংটিং, টুকটুক, কর্ণফুলি নদী , কাপ্তাই বাঁধ, ঝুলন্ত ব্রীজ, পলওয়েল পার্ক, রাজবন বিহার, চাকমা রাজার বাড়ি, নেভী একাডেমী, ইত্যাদি। এই সকল স্পট দেখতে আপনার ২-৩ দিনের মত সময় লাগবে।
কাপ্তাই লেক ভ্রমণে পর্যটকদের প্রধান আকর্ষন হচ্ছে লেকের তাজা মাছ। লেকের বিশাল সাইজের চিতল, বড় বড় রুই মাছ, কাচকি, চাপিলা ইত্যাদি। আবার অনেক পাহাড়ী খাবার যেমন ব্যাম্বু চিকেন, রুই ক্যাবং, ব্যাম্বু বিরিয়ানী, ব্যাম্বু রুই, রুই মাছের স্পেশাল ভর্তা এইসব খেতে চান। লেকের রেস্তরা গুলোর স্পেশাল ম্যানু হচ্ছে কাচকি ফ্রাই, ছাপিলা ফ্রাই, কলা মৌছা, স্পেশাল ডাল, স্পেশাল সালাদ। এইসব রেস্তরা গুলো সকাল ১০ থেকে সন্ধ্যা ০৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে। বড় গ্রুপ হলে আগে থেকেই অর্ডার দিয়ে যাবেন। কি কি খেতে চান সেটাও সিলেক্ট করে দিবেন। খাবারের দামের বিষয়ে আগে থেকেই সব কিছু আলোচনা করে নিবেন। এই রেস্তরা গুলোর খাবারের মান খুবই ভালো। লেকের রেষ্টুরেন্ট গুলোর নাম হচ্ছে- ঝুমঘর, চাং পাং, টং ঘর।
কাপ্তাই লেকে কোথায় থাকবেন, কোথায় কোথায় ঘুরবেন, কি খাবেন এই সব তথ্য জানতে পড়ুনঃ কাপ্তাই লেক