সাজেকে প্রবেশের পর প্রথম যে পাড়াটি পড়বে সেটাই রুইলুই পাড়া (Ruilui Para)। ১৮৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় রুইলুই পাড়া। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে রুইলুই পাড়ার উচ্চতা ১৭২০ ফিট। বেশিরভাগ হোটেল এবং রিসোর্টগুলো রুইলুই পাড়াতেই অবস্থিত। এবং সাজের এই পাড়াটিই সবচাইতে বেশী জমজমাট। বাংলাদেশের সব চাইতে উচুতে যে মসজিদটি অবস্থিত সেটাও এই রুইলুই পাড়াতেই। এই রুইলুই পাড়া থেকেই আপনি মেঘ বালিকাদের উড়তে দেখবেন বেশ ভালোভাবে। হঠাত দেখবেন সে আপনাকে ছুঁয়ে দিয়ে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে চলে যাবে। যেহেতু রাস্তার দু পাশেই রিসোর্ট, রিসোর্টের সামনে ফুটে থাকা নানান বর্ণের ফুল আপনাকে মুগ্ধ করবে। দূর পাহাড়ে খেলা করতে থাকা মেঘেদের দল আপনাকে বিমোহিত করবে। দিনের বিভিন্ন সময় সাজেকের রুইলুই পাড়ার কয়েক রকম রূপ আপনি দেখতে পাবেন।
রুইলুই পাড়ার সকাল
রুইলুই পাড়া থেকে ভোরে আপনি মেঘের সাগরের অদ্ভূত সুন্দর দৃশ্য দেখতে পাবেন। পাহাড়ের চূড়াগুলোকে মনে একেকটা দ্বীপ। সকালে রুইলুইয়ের রাস্তায় মেঘের দীড়াদৌড়ি ও দেখতে পাবেন। চাইলে হালকা করে নিজেকে মেঘের মাঝে হারাতে পারবেন। নিজেকে মেঘের সাগরে হারাতে চাইলে সকালে আরামের ঘুম কে একটুখনি হারাম করতে হবে। আপনার রিসোর্টটি যদি মেঘের খুব সন্নিকটে হয় তাহলে প্রিয় মানুষটির সাথে এক কাপ রঙ চা হাতে নিয়ে এই মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন। রাতের মাঝামাঝি সময় থেকে দুই পাহাড়ের মাঝে শুভ্র মেঘ জমতে থাকে। দুপুরের আগেই এই মেঘ আবার হারিয়ে যায়। মেঘের কাছাকাছি থাকার সব চাইত সুন্দর রিসোর্টি বুকিং দিতে উপরে “ রিসোর্ট বুকিং ” এ ক্লিক করুন।
রুইলুই পাড়ার বিকেল
বিকেলে সাজেকের পাহাড়ের সবুজ রং য়ের বিশালতা বের হয়ে আসে। সবুজের উপর পাহাড়ের গা ঘেঁষে ছোট ছোট মেঘেদের দলের উড়ে যাওয়া দেখতে পাবেন। আবার কিছু মেঘের দল আবার এক জায়গায় দাঁড়িয়ে গাছের সঙ্গে বেশ জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছে। বিকেলে হালকা একটু বৃষ্টি হয়ে গেলে তো কথাই নেই! বৃষ্টি শেষে আপনি দেখবেন চারদিক থেকে আসা কুয়াশার মত মেঘ আপনাকে ঘিরে ধরেছে। মাত্র দুই হাত দূরেও ঠিকমত আপনি কিছু দেখতে পাচ্ছেন না। বৃষ্টির পর সাজেকের পুরো রুইলুই পাড়া এইভাবেই আচ্ছাদিত হয় মেঘের চাদরে। বিকেলে হ্যালীপ্যাড থেকে সাজেকের সব চাইতে সুন্দর দৃশ্য দেখা যায়। তাই সকল পর্যটক বিকেলে হ্যালীপ্যাডে ভিড় জমায়। রুইলুই পাড়ার এই হ্যালীপ্যাড থেকেই সূর্যাস্ত দেখে সকল পর্যটক রিসোর্টে ফেরে।
রুইলুই পাড়ার সন্ধ্যা
সন্ধ্যায় এ পাড়া এখন অন্যভাবে জেগে উঠে। রিসোর্ট গুলোর শোভাবর্ধনের জন্য লাগানো লালনীল বাতি, প্রিয় মানুষটির হাত ধরে রাস্তায় হাঁটা, তরুন তরুনিদের আড্ডা, গলা ছেড়ে কেউ কেউ গাইছেন তার প্রিয় গান। কেউ কেউ রাস্তার পাশে লাগানো বেঞ্চিতে বসে প্রিয়জনকে সাথে নিয়ে পরিষ্কার যকযকে তকতকে আকাশ দেখছেন, চাঁদকে সাক্ষী রেখে নতুন করে হয়তো ছেড়ে না যাওয়ার সপথ করছেন। সন্ধ্যায় রুইলুই পাড়ার রেষ্টুরেন্টে মজাদার খাবারের দারুন ঘ্রানে পুরো পাড়া মৌ মৌ করে। সন্ধ্যায় পাহাড়ের নিরবতা উপভোগ করতে চাইলে চলে যেতে পারেন হ্যালীপ্যাডে।
রুইলুই পাড়ার রাত
রাত ১০ টার পর এ পাড়া আস্তে আস্তে নিরব হতে শুরু করে। ঠিক এ সময়ে কিছু মানুষ বের হন শুধুমাত্র পাহাড়ের নীরবতা উপভোগ করার জন্য। রাতে পাহাড় যখন ঘুমায় চাঁদ তাকে পাহার দেয়। পূর্নিমার সময় যা অদ্ভূত সুন্দর দেখায়। মাঝ রাত থেকেই দুর পাহাড়ের গায়ে জমতে থাকে শুভ্র মেঘ। চাঁদের হালকা আলোয় এই অদ্ভূত সৌন্দর্য্য আপনাকে অভিভূত করবে।
সাজেক ভ্রমণের সকল তথ্য এবং রিসোর্ট বুকিং এর জন্য যোগাযোগ করুন +8801841862600
যেভাবে আসবেন রুইলুই পাড়ায়
বাংলাদেশের যে কোন প্রান্ত থেকে প্রথমে চলে আসুন খাগড়াছড়িতে। খাগড়াছড়ি থেকে জীপ গাড়ি, মাহিন্দ্রা গাড়ি, সি,এন,জি অথবা বাইকে করে চলে আসুন সাজেকের রুইলুই পাড়ায়। দিনে দুইবার বাঘাইহাট থেকে সাজেক প্রবেশের অনুমতি মেলে। প্রথমটা সকাল ১০ টায় পরেরটা বিকাল ০৩ টায়। এসকর্ট মিস করলে পরবর্তী এসকর্ট এর জন্য অপেক্ষা করতে হবে। তাই নির্দিষ্ট সময়ের আগেই বাগাইহাট আর্মি ক্যাম্প পৌঁছানোর চেষ্টা করবেন।
খাবার দাবার
সাজেকের রুইলুই পাড়ায় অনেক গুলো রেষ্টরেন্ট আছে, সব রেষ্টরেন্টই বাঙ্গালী এবং পাহাড়ি খাবার পাবেন। সাজেক আসলে যে খাবার গুলো অবশ্যই টেষ্ট করে দেখবেন তাহল ব্যাম্বু চিকেন, ব্যাম্বু বীরিয়ানী, বাঁশ কোরল সবজি, চিকেন লাচ্চু, বাঁশের চা, বিভিন্ন আইটেমের ভর্তা। ফলের মধ্যে কলা আর পেঁপে সবসময়ই পাওয়া। অন্যান্য সিজনাল ফলও পাওয়া যায়। এইখানের ফলের স্বাদ অতুলনীয়। রুইলুই পাড়ায় সকালে হাট বসে, আপনি চাইলে আপনার পরিবারের জন্য কিছু সবজি কিনে নিতে পারেন।
কোথায় থাকবেন
সাজেকের রুইলুই পাড়ায় থাকার জন্য অনেক হোটেল এবং রিসোর্ট আছে। বেশিরভাগ রিসোর্ট বাঁশ কাঠের তৈরি। ইকো রিসোর্ট হওয়ায় আপনি এইখানে অন্যরকম অনুভূতি পাবেন। আসার আগে অবশ্যই রিসোর্ট বুকিং দিয়ে আসবেন। প্রিমিয়াম এবং ইকোনমি রিসোর্ট বুকিং এর জন্য এই নাম্বারে যোগাযোগ করুন +8801841862600
সাজেকের রুইলুই পাড়া ভ্রমণে যে বিষয় গুলো অবশ্যই মনে রাখবেন
• সাজেক যাওয়ার সময় চলন্ত গাড়ি থেকে স্থানীয় শিশুদের চকলেট, বিস্কুট, টাকা ও অন্যান্য জিনিসপত্র ছুঁড়ে মারবেন না।
• স্থানীয় আদিবাসীদের ছবি তোলার জন্য অবশ্যই অনুমতি নিয়ে নিবেন।
• স্থানীয় আদিবাসীরা অনেক সহজ সরল তাদের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ ব্যবহার করবেন।
• স্থানীয় আদিবাসীদের সংস্কৃতির প্রতি অসন্মান করবেন না।
• এসকর্টের নির্দিষ্ট সময়ের আগেই বাঘাইহাট আর্মি ক্যাম্পে চলে আসবেন।
• আর্মিদের এরিয়ায় ছবি তোলা সম্পূর্ণ নিষেধ, তাই সকল ক্যান্টনমেন্ট এবং ক্যাম্পে ছবি তোলা থেক বিরত থাকুন।
• সাজেকের রাস্তা অনেক আঁকাবাঁকা ও অনেক উঁচু নিচু তাই ভ্রমণে গাড়ির ছাদে ভ্রমণ না করাই উওম।
• সাজেকে শুধুমাত্র রবি, এয়ারটেলের এবং টেলিটকের নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়, তাই ভ্রমণের সময় এইগূলোর যেকোন একটা সঙ্গে রাখুন।
• আসার আগে অবশ্যই হোটেল / রিসোর্ট বুকিং দিয়ে আসবেন।
• জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি সঙ্গে রাখবেন।
• ভ্রমণে গ্যাজেট সমূহ চার্জের জন্য পাওয়ার ব্যাংক সঙ্গে রাখুন।
• সাজেক ভ্যালীর সৌন্দর্য্য এবং পরিবেশ রক্ষায় আবর্জনা যেখানে সেখানে ফেলা থেকে বিরত থাকুন।
আরো পড়ুন
- খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক যাওয়া আসার জীপ ভাড়া এবং বুকিং করতে পড়ুনঃ সাজেকের জীপ বুকিং ও ভাড়া
- সাজেক ভ্যালীর ভ্রমণের আদ্যোপান্তঃ সাজেক ভ্যালী