কংলাক পাড়া (Konglak Para) হচ্ছে সাজেকের শেষ গ্রাম। সাজেকের সবচেয়ে উঁচু স্থান এটি। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে কংলাক পাড়ার উচ্চতা প্রায় ১৮০০ ফিট। রুইলুই পাড়ার একদম শেষ প্রান্তে আছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের একটি ক্যাম্প। এই বিজিবি ক্যাম্প থেকে কংলাক পাড়ার দুরুত্ব প্রায় ১.৫-২ কিলোমিটার। সাজেকের জিরো কিলোমিটার অথবা হ্যালিপ্যাড থেকে কংলাক পাড়া হেঁটে আসতে সময় লাগবে মোটামুটি ৪০-৫০ মিনিট। আর গাড়িতে আসতে ৫-৭ মিনিট। কংলাক পাড়ায় ১২-১৫ টি পরিবারের বাস। যারা লুসাই এবং ত্রিপুরা জনগোষ্ঠির। এইখানে একটি স্কুল আছে। একটি চার্জ আছে। পর্যটক বাড়ার কারণে এইখানে বেশ কিছু রিসোর্ট গড়ে উঠেছে। আরও আছে বেশ কিছু খাবার দোকান এবং চায়ের দোকান। কংলাকের সৌন্দর্য্য আপনাকে মুগ্ধ করবেই। কংলাকের একদম চূড়া থেকে চারদিকের উপত্যকা আপনাকে বিমোহিত করবে। সকালের কংলাক তো আরো মনমুগ্ধকর, চারদিকে শুধু মেঘ আর মেঘ। নিজেকে মেঘের রাজ্যের রাজা মনে করবেন। সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দেখার জন্য সাজেকের সব চাইতে উত্তম জায়গা হচ্ছে এই কংলাক পাহাড়। এইখান থেকে আপনি ভারতের বিখ্যাত লুসাই পাহাড়ের দেখা পাবেন, যে পাহাড় থেকেই উৎপত্তি হচ্ছে আমাদের কর্ণফুলি নদীর। এইখান থেকে ভারতের মিজোরাম সীমান্ত খুব কাছে, পায়ে হেঁটে মাত্র ২-২.৫ ঘন্টা সময় লাগে।
যেভাবে আসবেন কংলাক পাড়ায়
বাংলাদেশের যে কোন প্রান্ত থেকে প্রথমে চলে আসুন খাগড়াছড়িতে। খাগড়াছড়ি থেকে জীপ গাড়ি, মাহিন্দ্রা গাড়ি, সি,এন,জি অথবা বাইকে করে চলে আসুন সাজেকের রুইলুই পাড়ায়। দিনে দুইবার বাঘাইহাট থেকে সাজেক প্রবেশের অনুমতি মেলে। প্রথমটা সকাল ১০ টায় পরেরটা বিকাল ০৩ টায়। এসকর্ট মিস করলে পরবর্তী এসকর্ট এর জন্য অপেক্ষা করতে হবে। তাই নির্দিষ্ট সময়ের আগেই বাগাইহাট আর্মি ক্যাম্প পৌঁছানোর চেষ্টা করবেন। রুইলুই পাড়া থেকে পায়ে হেঁটে অথবা গাড়িতে করে চলে আসতে পারেন কংলাক পাড়ায়। গাড়ি কংলাক পাহাড়ের নিচে থাকবে বাকি কিছুটা পথ সরু পাহাড় ট্র্যাকিং করে আসতে। রাস্তাটা বিপদজনক নয়। একটু সাবধানে হাটলে সবাই আসতে পারবে। নিচে ছোট ছোট বাচ্ছারা উপরে উঠার জন্য লাঠি বিক্রয় করে তদের কাছ থেকে একটি লাঠি কিনে তার সাহায্য নিয়েও উপরে উঠে আসতে পারেন। লাঠি কিনলে আপনার এবং সেই বাচ্ছাটিরও উপকার হবে। বৃষ্টির সময় খুব সাবধানে উঠার চেষ্টা করেবন।
খাবার দাবার
সাজেকের কংলাক পাড়ায় কোন রেষ্টুরেন্ট নাই, তবে কংলাকে সকল রিসোর্টেই তাদের অতিথিদের জন্য রান্না করে থাকে। আপনি অর্ডার করে থাকলে আগে থেকেই আপনার পছন্দের খাবার রান্না করে রাখবে। সাজেক আসলে যে খাবার গুলো অবশ্যই টেষ্ট করে দেখবেন তাহল ব্যাম্বু চকেন, ব্যাম্বু বীরিয়ানী, বাঁশ কোরল সবজি, চিকেন লাচ্চু, বাঁশের চা, বিভিন্ন আইটেমের ভর্তা। ফলের মধ্যে কলা আর পেঁপে সবসময়ই পাওয়া। অন্যান্য সিজনাল ফলও পাওয়া যায়। এইখানের ফলের স্বাদ অতুলনীয়। কংলাকে “মিছরি” নামের এক ফল পাওয়া যায়। যা দেখতে অনেকটাই পেপের মত। মিছরির বিচি খেতে খুব সুস্বাধু। আর উপরের অংশ দিয়ে সবজি রান্না করা যায়। এইখানে আসলে অবশ্যই এই ফল একবার হলে খেয়ে দেখবেন।
কোথায় থাকবেন
সাজেকের কংলাক পাড়ায় থাকার জন্য অনেক হোটেল এবং রিসোর্ট আছে। বেশিরভাগ রিসোর্ট বাঁশ কাঠের তৈরি। ইকো রিসোর্ট হওয়ায় আপনি এইখানে অন্যরকম অনুভূতি পাবেন। আসার আগে অবশ্যই রিসোর্ট বুকিং দিয়ে আসবেন।
সাজেকের কংলাক পাড়া ভ্রমণে যে বিষয় গুলো অবশ্যই মনে রাখবেন
- সাজেক যাওয়ার সময় চলন্ত গাড়ি থেকে স্থানীয় শিশুদের চকলেট, বিস্কুট, টাকা ও অন্যান্য জিনিসপত্র ছুঁড়ে মারবেন না।
- নিচ থেকে খুব সাবধানে উপরে উঠবেন, প্রয়োজনে লাঠি ব্যাবহার করবেন।
- স্থানীয় আদিবাসীদের ছবি তোলার জন্য অবশ্যই অনুমতি নিয়ে নিবেন।
- স্থানীয় আদিবাসীরা অনেক সহজ সরল তাদের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ ব্যবহার করবেন।
- স্থানীয় আদিবাসীদের সংস্কৃতির প্রতি অসন্মান করবেন না।
- এসকর্টের নির্দিষ্ট সময়ের আগেই বাঘাইহাট আর্মি ক্যাম্পে চলে আসবেন।
- আর্মিদের এরিয়ায় ছবি তোলা সম্পূর্ণ নিষেধ, তাই সকল ক্যান্টনমেন্ট এবং ক্যাম্পে ছবি তোলা থেক বিরত থাকুন।
- সাজেকের রাস্তা অনেক আঁকাবাঁকা ও অনেক উঁচু নিচু তাই ভ্রমণে গাড়ির ছাদে ভ্রমণ না করাই উওম।
- সাজেকে শুধুমাত্র রবি, এয়ারটেলের এবং টেলিটকের নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়, তাই ভ্রমণের সময় এইগূলোর যেকোন একটা সঙ্গে রাখুন।
- আসার আগে অবশ্যই হোটেল / রিসোর্ট বুকিং দিয়ে আসবেন।
- জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি সঙ্গে রাখবেন।
- ভ্রমণে গ্যাজেট সমূহ চার্জের জন্য পাওয়ার ব্যাংক সঙ্গে রাখুন।
- সাজেক ভ্যালীর সৌন্দর্য্য এবং পরিবেশ রক্ষায় আবর্জনা যেখানে সেখানে ফেলা থেকে বিরত থাকুন।